views
ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক: প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে সতর্কতার প্রয়োজন
ভাত বাঙালির প্রধান খাদ্য। প্রতিদিনের রান্নাঘরে ভাতের সঙ্গে যে তরল উপাদানটি তৈরি হয়, সেটি হলো ভাতের মাড়। বহু বছর ধরেই অনেকেই এই মাড় পান করেন কিংবা রূপচর্চায় ব্যবহার করেন। অনেক মা-বাবা ছোট শিশুদের পুষ্টির জন্য ভাতের মাড় খাওয়ান। তবে যেটি আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় তা হলো—এই উপ seemingly harmless উপাদানের কিছু দিক হতে পারে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই সময় এসেছে একটু গভীরভাবে বোঝার যে ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক কী কী এবং কীভাবে আমরা এর থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি।
ভাতের মাড় কী?
ভাত রান্না করার সময় যে সাদা পানির মতো তরল বের হয় সেটিকেই বলা হয় ভাতের মাড়। এটি মূলত চালের মধ্যে থাকা স্টার্চ বা শ্বেতসার পানিতে মিশে তৈরি হয়। অনেকেই একে "Rice Water" নামেও চেনেন। এই মাড় গরম অবস্থায় পান করলে অনেকে মনে করেন এটি হালকা গ্যাস্ট্রিক কমায় বা শক্তি জোগায়। অনেকে আবার চুলে বা ত্বকে ব্যবহার করেন ঘরোয়া রূপচর্চার উপকরণ হিসেবে। তবে এর সব ব্যবহারই স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
ভাতের মাড়ে কী থাকে?
ভাতের মাড়ে প্রধানত থাকে:
-
স্টার্চ বা শ্বেতসার
-
সামান্য পরিমাণে ভিটামিন বি
-
অল্প কিছু খনিজ উপাদান
-
গরম অবস্থায় মুক্ত হওয়া প্রোটিনের কিছু অংশ
যদিও এগুলোর কিছু উপকার রয়েছে, তবে অতিরিক্ত বা ভুলভাবে গ্রহণ করলে সেটি উল্টো ক্ষতি করতে পারে।
ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক
১. অতিরিক্ত শর্করার কারণে ওজন বৃদ্ধি
ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে এতে থাকা অতিরিক্ত শর্করা (carbohydrate)। এই মাড় মূলত স্টার্চ বা চিনি জাতীয় উপাদানে ভরপুর, যা দ্রুত রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়।
যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান, ডায়েট মেনে চলেন বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রয়েছেন—তাদের জন্য ভাতের মাড় একটি বিপজ্জনক খাদ্য হতে পারে। অতিরিক্ত শর্করা শরীরে জমে ট্রাইগ্লিসারাইড তৈরি করে, যা ফ্যাটের আকারে দেহে জমে ওজন ও স্থূলতা বাড়িয়ে দেয়।
২. রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়াতে সহায়ক
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ভাতের মাড় একেবারেই উপযোগী নয়। এতে থাকা সহজে হজমযোগ্য কার্বোহাইড্রেট রক্তে সুগারের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে। অনেকেই মনে করেন মাড় হালকা, তাই ডায়াবেটিসে সমস্যা হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটি Glycemic Index অনুযায়ী উচ্চ মাত্রার খাবার।
৩. অতিরিক্ত সেবনে পেটের সমস্যা
গরম অবস্থায় বেশি পরিমাণে ভাতের মাড় পান করলে হজমে সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির প্রবণতা যাদের আছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি উল্টো সমস্যা তৈরি করতে পারে। স্টার্চ বেশি হওয়ায় পেটে গ্যাস, অস্বস্তি এবং ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
৪. চর্মরোগ বা অ্যালার্জির কারণ হতে পারে
অনেকেই রূপচর্চার জন্য ভাতের মাড় ব্যবহার করেন। এটি প্রাকৃতিক টোনার, স্কিন ব্রাইটনার, বা হেয়ার রিন্স হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে এটি সবার জন্য উপযুক্ত নয়। অনেক ত্বক সংবেদনশীল হয় বা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ফলে মাড় ব্যবহারে দেখা দিতে পারে চুলকানি, র্যাশ, বা ফুসকুড়ির মতো সমস্যা।
ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক হিসেবে ত্বকের প্রতিক্রিয়াও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত, বিশেষ করে যারা একে নিয়মিত ব্যবহার করেন।
৫. হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে শিশুদের মধ্যে
অনেক মা-বাবা মনে করেন ছোট শিশুদের জন্য ভাতের মাড় একটি আদর্শ খাবার। তবে মাড়ে প্রোটিনের পরিমাণ খুব কম, আর শর্করার পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় এটি শিশুর পেট ভরালেও পুষ্টি দিতে পারে না। বরং দীর্ঘদিন শিশুকে এই খাদ্য দিলে অপুষ্টি, কোষ্ঠকাঠিন্য, কিংবা মেটাবলিজম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কীভাবে সতর্ক থাকবেন?
✅ সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করুন
যদি আপনি ভাতের মাড় পান করতে চান, তবে তা অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে করুন। প্রতিদিনের খাদ্য হিসেবে নয়, মাঝে মাঝে হালকা শরীর খারাপ থাকলে এটি গ্রহণ করা যেতে পারে।
✅ শিশুদের জন্য বিকল্প দিন
শিশুদের জন্য ভাতের মাড়ের চেয়ে দুধ, সুজি, ডাল, বা ফলভিত্তিক খাবার অনেক বেশি উপকারী। শুধুমাত্র পেট ভরানোর জন্য মাড় না খাইয়ে পুষ্টির দিকে জোর দিন।
✅ ত্বক বা চুলে ব্যবহারের আগে পরীক্ষা করুন
মাড় প্রথমবার ব্যবহারের আগে হাতের ওপর পরীক্ষা করে দেখুন ত্বকে কোনো প্রতিক্রিয়া হয় কি না। যদি র্যাশ বা চুলকানি হয়, তাহলে ব্যবহার না করাই ভালো।
উপসংহার
ভাতের মাড় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত নানা ধরণের মত রয়েছে। কেউ বলেন এটি উপকারী, কেউ বলেন ক্ষতিকর। তবে বাস্তবতা হলো, প্রতিটি খাবারেরই উপকার ও অপকার উভয়ই থাকতে পারে—বিষয়টি নির্ভর করে পরিমাণ, নিয়ম এবং ব্যবহারকারীর শারীরিক অবস্থার উপর।
তাই সচেতনভাবে গ্রহণ করা উচিত এবং অন্ধভাবে প্রচলিত ধারণার উপর নির্ভর না করে নিজস্ব স্বাস্থ্যগত প্রেক্ষাপট বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। আর এই প্রেক্ষাপটেই আমরা বলি—ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানা এবং তৎপর থাকা আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতারই একটি অংশ।


Comments
0 comment